বাংলাদেশে প্রথমবারের মত কচুরিপানা এবং রিসাইকেল জিন্স দিয়ে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জুতা তৈরি করেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলের ৪ শিক্ষার্থী।
বর্তমানে বাংলাদেশের জলাশয়ে যে কচুরিপানা দেখা যায় ১৫০ বছর আগেও এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না এখানে। মূলত ১৮৮৪ সালের দিকে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গল থেকে এদেশে নিয়ে আসা হয় এটি। দেশের জন্য যেন এক অভিশাপ ছিল এই উদ্ভিদ। কারণ খুব সহজেই বংশ বিস্তার করতে পারে এটি। যার কারণে জলাশয়ে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে মারা যায় অনেক মাছ এবং উদ্ভিদ।
কচুরিপানার এই সমস্যার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ডেনিম (জিন্সের প্যান্ট বা জ্যাকেট তৈরি হয় যে কাপড় দিয়ে) থেকে তৈরি বর্জ্য একটি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর ২.১৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডেনিম বর্জ্য তৈরি হয় যার বেশিরভাগেরই শেষ স্থান হয় ল্যান্ডফিলে৷
এত সব সমস্যা সমাধানে বুটেক্সের ৪ শিক্ষার্থী মিলে প্রথমবারের মত কচুরিপানা এবং অব্যবহৃত বা ফেলা দেওয়া ডেনিম কাপড় দিয়ে তৈরি করেছে পরিবেশ বান্ধব জুতা। যার নাম তারা দিয়েছে ইকো-স্টেপ। এই জুতার ইনসোল এবং ডেকোরেশনের কাজে ব্রেইড হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কচুরিপানা। অপরদিকে জুতার উপরের বাইরের আবরণ তৈরি করা হয়েছে ডেনিম কাপড় দিয়ে।
মূলত জুতার ইনসোল ব্রেইডেড উইভ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। ভেজা কুচরিপানার কান্ডগুলো শুকিয়ে এরপর তা দিয়ে হাতে ব্রেইডিং করে লম্বা স্ট্র্যান্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। তারপর এই ব্রেইডেড স্ট্র্যান্ড পেঁচিয়ে জুতার সোলের আকৃতি গঠন করা হয়। গঠিত অংশগুলো সেলাই (স্টিচিং) করে ইনসোল সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
শুধু ইনসোলেই নয়, কচুরিপানার তৈরি এই ব্রেইডেড স্ট্র্যান্ড জুতার চারপাশে ডেকোরেটিভ লেইস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে, যা এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও হস্তশিল্পের ছাপ যুক্ত করেছে। এর সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী কচুরিপানা এবং ডেনিম ব্যবহারের কারণে জুতাটি যেমন পরিবেশবান্ধব হয়েছে, একইভাবে কচুরিপানার উইভের উঁচু নীচু গড়নের কারণে জুতাটি পড়তেও অনেক আরামদায়ক।
সঠিক ভাবে যত্ন নিলে কচুরিপানার এই জুতা ১ বছরেও ক্ষয়ের শিক্ষার হবে না। এছাড়া কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এই ব্যবহার উপযোগিতা ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। কচুরিপানা ও তুলা দিয়ে তৈরি ডেনিম ব্যবহার করায় মাটিতে ফেলে দেওয়ার ৩-৪ মাসের মধ্যেই ইনসোল, লেইস এবং ১০-১২ মাসে ডেনিম সম্পূর্ণ মাটির সাথে মিশে যাবে৷ অন্যান্য পরিবেশ বান্ধব জুতার থেকেও এটি সাশ্রয়ী বলে জানিয়েছে তারা। প্রতি জোড়া জুতা তৈরি করতে খরচ হবে মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা।
মূলত বুটেক্সের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ল্যাবের অংশ হিসেবে এই জুতাটি তৈরি করেছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪ শিক্ষার্থী তাশফিক হোসাইন, অর্ণব হালদার অভি, ফারদীন বিন মনির এবং অন্বয় দেবনাথ৷ এছাড়া সুপারভাইজার হিসেবে যুক্ত ছিলেন বুটেক্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. মার্জিয়া দুলাল।
Writer:Khadija khatun
Ambassador of Textile Engineers Club -TEC
(Feed generated with FetchRSS)